Skip to main content

অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য

অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে ‘আলিমগণ তিনটি প্রসিদ্ধ মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:

এক. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটা মালিকী, শাফি‘ঈ এবং হাম্বালী মাযহাবের মত। [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

দুই. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে এবং খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করাই উত্তম। এটি হানাফী মাযহাবের মত। [ইমাম কাসানী (রাহিমাহুল্লাহ), বাদাই‘উস সানা’ই‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৪৩; দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

তিন. প্রয়োজন দেখা দিলে বা কল্যাণকর মনে হলে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ আছে। একটি অপ্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী এটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি মত। এই মতকে পছন্দ করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৮২-৮৩; বাদশাহ ফাহাদ বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]

·
আমরা এই তিনটি মতের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্বানের মতটিকে অগ্রগণ্য ও সঠিক বলে থাকি। আর আমরা তা বলি বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করছি।

·
এক. রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য দিতে বলেছেন। এ ব্যাপারে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসগুলোতে স্রেফ খাদ্যদ্রব্যের কথা এসেছে, খাদ্যমূল্য বা অর্থের কথা আসেনি। যেমন: ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,

أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَرَضَ زَكَاةَ الفِطرِ صَاعًا مِن تَمرٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ، أو عَبدٍ ذَكَرٍ أو أُنثَى مِنَ المُسلِمِينَ.

“প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নর-নারী, ছোটো-বড়ো সকল মুসলিমের ওপর আল্লাহ’র রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক তা এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪]

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,

كُنَّا نُخرِجُ فِي عَهدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَومَ الفِطرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ. وَقَالَ أبُو سَعيدٍ: وَكَانَ طَعَامُنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأقِطُ وَالتَّمرُ.

“আমরা আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে আদায় করতাম। আবূ সা‘ঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর’।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১০]

রাসূল ﷺ এর যুগে অর্থ থাকা সত্ত্বেও কোনো বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।

·
দুই. রাসূল ﷺ ফিতরাকে মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফরজ করেছেন, অর্থস্বরূপ ফরজ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الفِطرِ طُهرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعمَةً لِلمَسَاكِينِ.

“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রোজা অবস্থায় কৃত অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণ থেকে রোজাদারকে পরিশুদ্ধকারীস্বরূপ এবং মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফিতরাকে ফরজ করেছেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; সনদ: হাসান]

·
তিন. ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো তা দলিলনির্ভর হতে হবে। সুতরাং কারও জন্য সেই ইবাদত করা জায়েজ নয়, যেই ইবাদত প্রজ্ঞাবান শরিয়তপ্রণেতা রাসূল ﷺ থেকে সাব্যস্ত হয়নি।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০৮; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)] আর শরিয়তপ্রণেতা কর্তৃক অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়নি।

·
চার. রাসূল ﷺ এর যুগে মুদ্রার প্রচলন ছিল এবং অভাবী ব্যক্তির বিদ্যমানতাও ছিল। তখন স্বাভাবিকভাবেই অভাবী ব্যক্তিরা অর্থের মুখাপেক্ষী ছিল। এতৎসত্ত্বেও রাসূল ﷺ এর যুগে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা হয়নি। আর এটি শরিয়তের একটি সুবিদিত মূলনীতি যে, প্রয়োজনের সময় আলোচনাকে বিলম্ব করা না-জায়েজ (لا يجوز تأخير البيان عن وقت الحاجة)। অর্থাৎ, প্রয়োজনের সময় হুকুম বর্ণনা করতে দেরি করা জায়েজ নয়। সুতরাং রাসূল ﷺ যেহেতু অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করার বৈধতা বর্ণনা করেননি, সেহেতু অর্থ দিয়ে তা আদায় করা শরিয়তসম্মত হবে না।

·
এখন আমরা আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া মতটির স্বপক্ষে আহলুস সুন্নাহ’র ইমামগণের বক্তব্য পেশ করব। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।

·
১. শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমামু দারিল হিজরাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস আল-আসবাহী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন,

ولا يجزئ أن يجعل الرجل مكان زكاة الفطر عرضًا من العروض وليس كذلك أمر النبي عليه الصلاة والسلام.

“ফিতরার জায়গায় অর্থ বা খাদ্যমূল্য নির্ধারণ করলে তা যথেষ্ট হবে না। নাবী ﷺ এভাবে আদেশ দেননি।” [আল-মুদাওয়্যানাতুল কুবরা, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৮৫; গৃহীত: tasfiatarbia.org]

·
২. শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,

ولا يؤدي قيمته (يعني طعام الفطرة).

“আর ফিতরার খাদ্যমূল্য দিয়ে তা আদায় করবে না।” [ইমাম শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) কিতাবুল উম্ম, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৭৪; দারুল ওয়াফা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
৩. শাইখুল ইসলাম ইমামু আহলিস সুন্নাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন,

ولا يعطي قيمته، قيل له: يقولون: عمر بن عبد العزيز كان يأخذ القيمة، قال: يدعون قول رسول الله ﷺ ويقولون قال فلان؟ قال ابن عمر: فرض رسول الله ﷺ. وقال الله: أطيعوا الله وأطيعوا الرسول. وقال قوم يردون السنن: قال وقال فلان.

“ফিতরার খাদ্যমূল্য প্রদান করবে না।” তখন তাঁকে বলা হলো, “তারা বলে, ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয খাদ্যমূল্য গ্রহণ করতেন।” তখন তিনি (ইমাম আহমাদ) বললেন, “তারা আল্লাহ’র রাসূলের ﷺ কথা পরিত্যাগ করছে, আর বলছে, অমুক এটা বলেছেন?! ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ (ফিতরা) ফরজ করেছেন।” আর আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা আল্লাহ’র আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো।” (সূরাহ নিসা: ৫৯) অথচ একদল লোক সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে বলছে, অমুক বলেছেন, আর তমুক বলেছেন!” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
৪. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করার পর বলেছেন,

ومما ذكرنا يَتَّضِحُ لصاحب الحق أن إخراج النقود في زكاة الفطر لا يجوز ولا يجزئ عمن أخرجه؛ لكونه مخالفا لما ذُكر من الأدلة الشرعية.

“আমরা যে আলোচনা করলাম তা সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট করে দেয় যে, অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, আর যে ব্যক্তি অর্থ দিয়ে আদায় করে, তার পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে না। যেহেতু তা উল্লিখিত শার‘ঈ দলিল বিরোধী।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২১১; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

·
৫. বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আল-মুজাদ্দিদ আল-ফাক্বীহুন নাক্বিদ ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

الذين يقولون بجواز إخراج صدقة الفطر نقودًا هم مخطئون، لأنهم يخالفون النص.

“যারা বলেন, অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা জায়েজ, তারা ভুলে পতিত হয়েছেন। কেননা তারা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধিতা করছেন।” [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর; ২৭৪ নং অডিয়ো ক্লিপ; সংগৃহীত: sahab.net]

·
৬. বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

لا يجوز أن تُدفَعَ زكاة الفطر نقودا بأي حال من الأحوال، بل تدفع طعاما، والفقير إذا شاء باع هذا الطعام وانتفع بثمنه.

“অর্থ দিয়ে ফিতরা দেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। বরং তা খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আদায় করতে হবে। তবে অভাবী ব্যক্তি চাইলে সে খাদ্য বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে উপকৃত হতে পারবে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৮; পৃষ্ঠা: ২৭৭; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
৭. সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,

إخراج القيمة نقودًا عن صدقة الفطر؛ هذا لا يجزئ؛ لأنه خلاف ما أمر به النبي ﷺ، لأن الرسول ﷺ أمر بإخراجه من الطعام. ... هذا قول جمهور أهل العلم، والأئمة الثلاثة: مالكٍ والشافعيِّ وأحمدَ رحمهم الله، وأجاز أبو حنيفة –رحمه الله– إخراج القيمة، ولكن هذا خلاف النص واجتهاد مع النص، ولا يجوز الإجتهاد مع وجود النص، ولهذا لما سئل الإمام أحمد رحمه الله عن إخراج القيمة وأن فلانًا أفتى بإخراج القيمة قال رحمه الله: يدعون قول رسول الله ﷺ ويأخذون بقول فلان. فالواجب العمل بالنص.

“অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা (আদায় হিসেবে) যথেষ্ট হবে না। কেননা তা নাবী ﷺ এর নির্দেশ বিরোধী। যেহেতু রাসূল ﷺ খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।... এটা অধিকাংশ ‘আলিমের মত। এটা তিন ইমাম তথা মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)’র মত। আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েজ বলেছেন। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধী এবং সুস্পষ্ট দলিলের সাথে ইজতিহাদ। আর সুস্পষ্ট দলিলের বিদ্যমানতায় ইজতিহাদ জায়েজ নয়। একারণে যখন ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) কে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং বলা হয় যে, অমুক (‘আলিম) ‘অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ’ ফাতওয়া দিয়েছেন, তখন তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা পরিত্যাগ করছে, আর অমুকের কথা গ্রহণ করছে!’ সুতরাং সুস্পষ্ট দলিল অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৩-৩০৫; দারুল ‘আসিমাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
৮. ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে,

في بلادنا زكاة الفطر تدفع مالًا بحجة أن المساكين لا يريدون حبوبًا وغيرها، فماذا نفعل؟

“আমাদের দেশে অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা হয় এ দলিলের ভিত্তিতে যে, মিসকীনরা শস্য চায় না। এক্ষেত্রে আমরা কী করব?”

শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,

ليس الأمر للمساكين، هذه عبادة، تنفذ كما جائت عن الرسول ﷺ، والذي لا يريد الطعام هذا ليس بمحتاج، أعطه المحتاج الذي يريد الطعام.

“এটা মিসকীনদের কথা অনুযায়ী হবে না। এটি একটি ইবাদত। রাসূল ﷺ থেকে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। আর যে খাদ্য চায় না, সে মূলত অভাবীই নয়। সুতরাং ফিতরা অভাবী ব্যক্তিকে দাও, যে খাদ্য চায়।” [দ্র.: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/12939.]

·
৯. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,

ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺗﻮﺯﻳﻊ ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻧﻘﺪًﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻓﻴﻤﺎ ﻧﻌﻠﻢ، ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ.

“আমাদের জানামতে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী অর্থ দ্বারা ফিতরা বণ্টন করা জায়েজ নয়। এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মত।”
ফাত‌ওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ক্বা‘ঊদ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ৯২৩১; প্রশ্ন নং: ৪; সংগৃহীত: alifta.net]

·
১০. স্থায়ী কমিটির আরেকটি ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,

ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻨﻘﻮﺩ ﺑﺪﻻً ﻣﻦ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻣﺮ ﺑﺈﺧﺮﺍﺝ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ.

“খাদ্যের পরিবর্তে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়। কেননা নাবী ﷺ খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; আল ইফতা ডট নেটে রমজান মাস সেকশনের ‘যাকাত ও ফিতরা’ অংশের ফাত‌ওয়া; প্রশ্ন নং: ৫; সংগৃহীত: alifta.net]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, বরং আবশ্যিকভাবে খাদ্যদ্রব্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে হবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয় জানার এবং তা যথাযথভাবে মানার তাওফীক্ব দান করুন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে

Comments

Popular posts from this blog

ফিতরা কি যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে?

ফিতরা কি যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে? · পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: ফিতরা পাওয়ার হকদার কারা, বা ফিতরা কয় খাতে বণ্টিত হবে, তা নিয়ে ‘আলিমগণ দুটি প্রসিদ্ধ মতে মতানৈক্য করেছেন। যথা: এক. ফিতরার খাত যাকাতের মতো। অর্থাৎ ফিতরা যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে। এই মতের স্বপক্ষে দলিল হলো সূরাহ তাওবাহ’র ৬০ নং আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে সাদাক্বাহ তথা যাকাত ৮ খাতে বণ্টিত হবে। আর ফিতরাও যেহেতু এক ধরনের সাদাক্বাহ বা যাকাত, কিংবা ফিতরা যেহেতু যাকাতের মতো, তাই এটাও যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটি হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বালী মাযহাবের মত। [কিতাবুল ফিক্বহি ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ, পৃষ্ঠা: ৩৩৯; আদ-দারুল ‘আলামিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); সাহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৫; আল-মাকতাবাতুত তাওফীক্বিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ বিহীন] দুই. ফিতরা পাওয়

ফিতরা আদায়ের সঠিক সময়

ফিতরা আদায়ের সঠিক সময় · পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ফিতরা আদায় করার দুটো সময় রয়েছে। যথা: (১) বৈধ সময়: আর তা হলো ঈদের এক দিন বা দুই দিন আগে, (২) উত্তম সময়: আর তা হলো ঈদের দিন ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ২৬৬; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)] সুতরাং বুঝা গেল যে, ফিতরা আদায় করার দুটো সময় আছে। আমরা এ ব্যাপারে সুন্নাহ থেকে দলিল বর্ণনা করছি। · ১. বৈধ সময়: ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা আদায় করা জায়েজ। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে (তাঁর আমল) বর্ণিত হয়েছে, أنَّهُمْ كَانُوا يُعطُونَ قَبلَ الفِطرِ بِيَومٍ أوْ يَومَينِ. “তিনি ফিতরার দ্রব্য গ্রহীতাদেরকে ফিতরা দিতেন, ঈদের এক দিন বা দুই দিন পূর্বেই।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১১] · ২. উত্