Skip to main content

ফিতরায় সা‘ এর পরিমাণের ব্যাপারে ‘আলিমগণের বক্তব্য

ফিতরায় সা‘ এর পরিমাণের ব্যাপারে ‘আলিমগণের বক্তব্য

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

ফিতরার পরিমাণ হিসাব করতে হবে কাইল (কাঠা বা পরিমাপের পাত্র) দিয়ে, ওজন দিয়ে নয়। ফিতরা পরিমাপ করা হবে সা‘ দ্বারা, আর সে সা‘ হলো নাবী ﷺ এর সা‘। যেমন আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,

كُنَّا نُعطِيهَا فِي زَمَانِ النَّبيِّ ﷺ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ.

“আমরা নাবী ﷺ এর যুগে এক সা‘ খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতাম।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৮; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৫]

বলাই বাহুল্য, সা‘ যে দ্রব্যের দ্বারা পূর্ণ করা হবে, সে দ্রব্য আলাদা হলে ওজনও আলাদা হবে। অর্থাৎ, এক সা‘ খেজুরের ওজন এক সা‘ গম বা এক সা‘ চাউলের চেয়ে আলাদা হবে। সুতরাং ফিতরাদাতা যখন ওজন দ্বারা ফিতরা আদায় করার ইচ্ছা করবেন, তখন অবশ্যই এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, তিনি যে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করবেন তা পূর্ণ এক সা‘ এর সমপরিমাণ।

·
এখানে দুটো জানার বিষয় রয়েছে। যথা:

এক. ফিতরা ওজন দিয়ে পরিমাপ করার চেয়ে কাইল দ্বারা পরিমাপ করাই অধিক সতর্কতামূলক পদ্ধতি। আর হাত দ্বারা পরিমাপ করলেও তা ‘কাইল দ্বারা পরিমাপ’ বলে গণ্য হবে। ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এক (নাবাউয়ী) সা‘ এর পরিমাণ হচ্ছে মধ্যম আকৃতির দুই হাত দিয়ে ৪ মুঠোর সমপরিমাণ শুকনো খাবার। যেমন: খেজুর, গম প্রভৃতি।... যখন একজন মুসলিম কাইল দিয়ে শুকনো খাবার (ফিতরা হিসেবে) বের করবে—যেমন: শুকনো খেজুর, ভালো গম, চাল, শুকনো কিসমিস, পনির প্রভৃতি—তখন তা ওজন দিয়ে বের করার চেয়ে অধিক সতর্কতামূলক বলে বিবেচিত হবে।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০৪-২০৫; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

·
দুই. ওজন (কিলোগ্রাম) হিসেবে মাদীনাহ’য় প্রচলিত এক নাবাউয়ী সা‘ এর পরিমাণ কতটুকু? এক্ষেত্রে ‘আলিমদের প্রস্তুতকৃত হিসাবে সামান্য মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। যেমন:

·
১. ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র মতানুযায়ী কিলোগ্রামের হিসাবে এক নাবাউয়ী সা‘ সমান ৩ কেজি। [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০৫]

·
২. ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র মতানুযায়ী এক সা‘ সমান ভালো মানের গমের ওজন ২ কেজি ৪০ গ্রাম। [আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১৭৬; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম ছাপা; সন: ১৪২৪ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

·
৩. ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “এক ভাই একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি করে চাল পাঠিয়েছেন। আমি তা মেপে দেখেছি। এর ওজন ২ কেজি ১০০ গ্রাম। আমি তা নাবাউয়ী সা‘ এর মাপ অনুযায়ীই পেয়েছি।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ২৭৬; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

জ্ঞাতব্য যে, সৌদি আরবের ‘উনাইযাহ শহরস্থ এক ধ্বংসস্থলে পিতলের তৈরি একটি নাবাউয়ী মুদ আবিষ্কৃত হয়। ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ওই মুদের মালিকের কাছ থেকে তা খুব চড়া দামে ক্রয় করেন। মুদের পাত্রটির গায়ে তার মালিকের নাম সনদ অনুযায়ী খোদাই করা ছিল। এই ক্রমধারা এক প্রখ্যাত সাহাবীর মাধ্যমে নাবী ﷺ পর্যন্ত পৌঁছেছে; আর সে সাহাবী হলেন যাইদ বিন সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)। আর বলাই বাহুল্য যে, নাবাউয়ী এক সা‘ সমান ৪ মুদ। [বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১৭৭]

·
৪. ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, “কিলোগ্রাম হিসেবে সা‘ এর মাপ প্রায় ৩ কেজি।” [দ্র.: www.alfawzan.af.org.sa/en/node/14927.]

·
৫. সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের গবেষণা অনুযায়ী সা‘ এর মাপ ২ কেজি ৬০০ গ্রাম। [মাজাল্লাতুল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ; খণ্ড: ৫৯; পৃষ্ঠা: ১৭৮; সংগৃহীত: alifta.net]

·
৬. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) ফাতওয়া অনুযায়ী এক সা‘ সমান প্রায় ৩ কেজি। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ১২৫৭২; সংগৃহীত: alifta.net]

আর সৌদি আরবে ইমাম ইবনু বায এবং স্থায়ী কমিটির ফাতওয়ার ওপরই আমলের প্রচলন রয়েছে। [মাজাল্লাতুল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ; খণ্ড: ৫৯; পৃষ্ঠা: ১৭৯]

·
আমাদের দেশে সাধারণত আড়াই কেজি চাল দিয়ে ফিতরা দেওয়া হয়। যেহেতু ওজনের ব্যাপারে ‘আলিমদের মতভেদ আছে, সেহেতু সরাসরি কাইল দিয়ে ফিতরা আদায় করাই অধিক সতর্কতামূলক পদ্ধতি। আর ওজন দিয়ে করলে সবচেয়ে বেশি ওজনের মত তথা ৩ কেজি’র মত অনুসরণ করা ভালো। যারা সমাজভুক্ত হয়ে একত্রে জমা করে ফিতরা আদায় ও বণ্টন করেন, তারা যদি সেখানে আড়াই কেজির বেশি দেন, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু কম দিলে সমস্যা হতে পারে। সেহেতু সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে হয় তিন কেজি দিন, আর না হয় আড়াই কেজি দিন। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Comments

Popular posts from this blog

ফিতরা কি যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে?

ফিতরা কি যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে? · পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: ফিতরা পাওয়ার হকদার কারা, বা ফিতরা কয় খাতে বণ্টিত হবে, তা নিয়ে ‘আলিমগণ দুটি প্রসিদ্ধ মতে মতানৈক্য করেছেন। যথা: এক. ফিতরার খাত যাকাতের মতো। অর্থাৎ ফিতরা যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে। এই মতের স্বপক্ষে দলিল হলো সূরাহ তাওবাহ’র ৬০ নং আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে সাদাক্বাহ তথা যাকাত ৮ খাতে বণ্টিত হবে। আর ফিতরাও যেহেতু এক ধরনের সাদাক্বাহ বা যাকাত, কিংবা ফিতরা যেহেতু যাকাতের মতো, তাই এটাও যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটি হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বালী মাযহাবের মত। [কিতাবুল ফিক্বহি ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ, পৃষ্ঠা: ৩৩৯; আদ-দারুল ‘আলামিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); সাহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৫; আল-মাকতাবাতুত তাওফীক্বিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ বিহীন] দুই. ফিতরা পাওয়

ফিতরা আদায়ের সঠিক সময়

ফিতরা আদায়ের সঠিক সময় · পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ফিতরা আদায় করার দুটো সময় রয়েছে। যথা: (১) বৈধ সময়: আর তা হলো ঈদের এক দিন বা দুই দিন আগে, (২) উত্তম সময়: আর তা হলো ঈদের দিন ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ২৬৬; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)] সুতরাং বুঝা গেল যে, ফিতরা আদায় করার দুটো সময় আছে। আমরা এ ব্যাপারে সুন্নাহ থেকে দলিল বর্ণনা করছি। · ১. বৈধ সময়: ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা আদায় করা জায়েজ। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে (তাঁর আমল) বর্ণিত হয়েছে, أنَّهُمْ كَانُوا يُعطُونَ قَبلَ الفِطرِ بِيَومٍ أوْ يَومَينِ. “তিনি ফিতরার দ্রব্য গ্রহীতাদেরকে ফিতরা দিতেন, ঈদের এক দিন বা দুই দিন পূর্বেই।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১১] · ২. উত্

অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য

অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য · পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে ‘আলিমগণ তিনটি প্রসিদ্ধ মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা: এক. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটা মালিকী, শাফি‘ঈ এবং হাম্বালী মাযহাবের মত। [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)] দুই. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে এবং খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করাই উত্তম। এটি হানাফী মাযহাবের মত। [ইমাম কাসানী (রাহিমাহুল্লাহ), বাদাই‘উস সানা’ই‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৪৩; দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি. (২য় প্রকাশ)] তিন. প্রয়োজন দেখা দিলে বা কল্যাণকর মনে হলে খাদ্যমূল